Historical Background

“অন্ধকার থেকে আলোর পথে”


যেবুন্নেছা মাদ্রাসাতুল বানাত: ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও দীনি জাগরণের এক স্মারক অধ্যায়

উত্তর ২৪ পরগনার রাজাপুর (গোরাতলা), চাঁপাপুকুর এলাকা একসময় পরিচিত ছিল এক আধ্যাত্মিক দরগাহ শরীফের জন্য। এখানে এসেছিলেন এক পুণ্যবান বুজুর্গ—পীর আব্বাস আলী রহ., যিনি স্থানীয়দের কাছে “গোরাচাঁদ পীর সাহেব” নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। শত শত মানুষ তাঁর দরগায় মানত করতে আসত, মোমবাতি জ্বালাত, তাবিজ-কবচে বিশ্বাস করত। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হতো বিশাল মেলা, যেখানে ধর্মীয় চেতনাকে ছাপিয়ে স্থান পায় লোকজ সংস্কৃতি ও শির্ক-মিশ্রিত রীতিনীতি।

আলোর পথে যাত্রা: একটি দীপ্ত বিপ্লবের শুরু 

কিন্তু কালের পরিবর্তনে কিছু দীনের খাদেম, আল্লাহভীরু মুত্তাকী মানুষ চিন্তা করেন—এই পবিত্র জমিতে শির্কের বদলে কুরআনের তিলাওয়াত ধ্বনিত হোক, বিদআতের পরিবর্তে সুন্নাহর চর্চা হোক। ২০১৬ সালে, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে , অল ইন্ডিয়া সুন্নাত অল জামাত এবং স্থানীয় কিছু সাহসী মানুষদের অটল সিদ্ধান্তে পীরের মেলা বন্ধ করা হয়, শির্কের চিহ্নগুলো সরিয়ে সেই দরগাহর স্থানে একটি মহিলা মাদ্রাসার ভিত্তি স্থাপন করা হয়—“যেবুন্নেছা মাদ্রাসাতুল বানাত”। এই সিদ্ধান্ত ছিল শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেয়ে অনেক বড়—এটি ছিল শয়তানি ধোঁকার বিরুদ্ধে আল্লাহর দীন কায়েম করার সাহসী পদক্ষেপ।

নামকরণের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য :

মাদ্রাসার নামকরণ করা হয় একজন ইতিহাসখ্যাত নারীর নাম অনুসারে—জেবুন্নেছা (রহ.), যিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব (রহ.)-এর কন্যা। তিনি ছিলেন একজন হাফিজা, আলিমা, ইসলামিক কবি ও সমাজচিন্তক। নারীদের জন্য দীনি শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। এই মহান নারীর আদর্শ অনুসরণে মাদ্রাসাটির লক্ষ্য—ছাত্রীদের মধ্যে ইলম, হায়া, তাকওয়া, আখলাক ও দীনের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংখ্যা ঃ

প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম বছরে ছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ জন। আজ আলহামদুলিল্লাহ্‌ সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ জনে। শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন, শিক্ষিকা রয়েছেন ৩ জন, যাঁরা কেউ হাফিজা, কেউ আলিমা, আবার কেউ বাংলা ও ইংরেজিতে শিক্ষিত। তাঁদের আন্তরিকতা, মেহনত ও তাকওয়ার মাধ্যমে ছাত্রীরা এগিয়ে যাচ্ছে দীনের পথে।

একটি ঐতিহাসিক রূপান্তর ঃ

এক সময় যেখানে মাজারে জড়ো হতো শির্কের মেলা, বাজত গান-বাজনা, জ্বলত মোমবাতি—আজ সেখানে ধ্বনিত হয় কুরআনের সুমিষ্ট তিলাওয়াত। যে স্থানে মানুষ খুঁজত অলৌকিকতা, আজ সেখানে ছাত্রীদের মাঝে জাগ্রত হচ্ছে সত্য, যুক্তি ও ঈমান। এই রূপান্তর শুধু একটি স্থানের নয়, এটি একটি চিন্তার রূপান্তর। এটি দীনের নামে বিদআত নয়, বরং খাঁটি ইসলামের এক দীপ্ত জাগরণ। মহান আল্লাহ আমাদের সম্মলিত প্রচেষ্টাকে কবুল করুন । আমিন